আজকের ব্যস্ত জীবনে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিমে সময় দেওয়া সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। অনেকেই কোমরের মেদ কমাতে চান, পেটের পেশি শক্ত করতে চান, বা শরীরের ভঙ্গি ঠিক রাখতে চান। কিন্তু দীর্ঘ সময় অনু
ীলন করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।
সুখবর হলো—এজন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে থাকার দরকার নেই। মাত্র ১০ মিনিটের একটি নিয়মিত অ্যাব ওয়ার্কআউট করলেই আপনি পেটের পেশি শক্ত করতে পারবেন, ভঙ্গি ঠিক রাখতে পারবেন এবং শরীরকে আরও ফিট রাখতে পারবেন।
এই আর্টিকেলে থাকছে—কেন কোর ট্রেনিং জরুরি, ১০ মিনিটের একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যাব ওয়ার্কআউট প্ল্যান, সাধারণ ভুলগুলো, এবং ধারাবাহিক থাকার কৌশল।
পেটের পেশি শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়—এটি শরীরের প্রায় সব নড়াচড়ায় ভূমিকা রাখে। শক্তিশালী কোর আপনার শরীরকে স্থিতিশীল করে, ভারসাম্য আনে এবং মেরুদণ্ডকে সুরক্ষা দেয়।
কোর ট্রেনিংয়ের সুবিধাগুলো হলো:
ভঙ্গি উন্নত হয় – কুঁজোভাব কমে, পিঠের চাপ হ্রাস পায়।
কোমর ও পিঠের ব্যথা কমে – শক্তিশালী কোর মেরুদণ্ডকে সাপোর্ট দেয়।
ক্রীড়া দক্ষতা বাড়ে – দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, ওজন তোলা সব কিছুতেই সহায়তা করে।
দৈনন্দিন কাজ সহজ হয় – ভার তোলা, ঝুঁকে কাজ করা, বা বাজার বহন করা।
ক্যালোরি পোড়ে দ্রুত – কারণ কোর একসাথে একাধিক পেশিকে সক্রিয় করে।
প্রতিদিন কয়েক মিনিট সময় দিলেই শরীরকে আরও শক্তিশালী ও আঘাতমুক্ত রাখা সম্ভব।
অনেকেই ভাবে ভালো ফিটনেসের জন্য দীর্ঘ সময় দরকার। আসলে গবেষণায় প্রমাণিত যে, ছোট ও ফোকাসড সেশনগুলো অনেক কার্যকরী। দশ মিনিটে ঠিকভাবে করলে অ্যাব পেশি গভীরভাবে কাজ করে।
আরেকটি সুবিধা হলো ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সহজ হয়। ব্যস্ত সময়েও এই ওয়ার্কআউট বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই, কারণ এটি অফিসের আগে, বিরতিতে বা ঘুমানোর আগে সহজেই করা যায়।
এই রুটিন আপনি বাড়িতে সহজে করতে পারবেন, কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়াই। শুধু একটি ম্যাট থাকলেই যথেষ্ট। প্রতিটি ব্যায়াম ৩০ সেকেন্ড করুন, তারপর ১০–১৫ সেকেন্ড বিশ্রাম নিন। সার্কিটটি দুইবার করুন।
কনুই কাঁধের নিচে রাখুন, শরীর সোজা রাখুন।
কোমর নিচে নামাবেন না বা বেশি উঁচু করবেন না।
চিত হয়ে শুয়ে হাঁটু বুকের দিকে আনুন।
ধীরে করুন, শরীরকে ঝাঁকাবেন না।
চিত হয়ে শুয়ে হাত মাথার পিছনে রাখুন।
হাঁটু একবারে একবারে উঠান, শরীর ঘুরিয়ে বিপরীত কনুই দিয়ে ছোঁয়ার চেষ্টা করুন।
একপাশে শুয়ে কনুই কাঁধের নিচে রাখুন।
কোমর উপরে তুলুন ও শরীর সোজা রাখুন।
পুশ-আপ অবস্থায় থেকে হাঁটু দ্রুত বুকের দিকে আনুন।
গতির সাথে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখুন।
হাঁটু বাঁকানো অবস্থায় বসুন।
শরীর সামান্য পিছনে হেলিয়ে দুই পাশে ঘুরুন।
কষ্ট বাড়াতে চাইলে পা মাটি থেকে তুলুন।
পুরো সার্কিটটি দুইবার করুন।
শুরু করার আগে এক মিনিট হালকা দৌড় বা টুইস্ট করুন। শেষে স্ট্রেচিং ও গভীর শ্বাস নিন। এটি আঘাত প্রতিরোধ করে এবং নমনীয়তা বাড়ায়।
অনেক সময় ভুলের কারণে ফল পাওয়া যায় না। যেমন:
গতি ব্যবহার করা – আসল পেশি কাজ করে না।
শ্বাস আটকানো – সহনশীলতা কমে যায়।
ভুল ভঙ্গি – পিঠে চাপ পড়ে, অ্যাব ঠিকমতো কাজ করে না।
একই ব্যায়াম বারবার – বৈচিত্র্য দরকার।
অতিরিক্ত ট্রেনিং – বিশ্রাম না পেলে পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
একটি সহজ পরিকল্পনা হতে পারে:
সোমবার: ১০ মিনিট অ্যাব ওয়ার্কআউট
মঙ্গলবার: হালকা কার্ডিও + স্ট্রেচিং
বুধবার: ১০ মিনিট অ্যাব ওয়ার্কআউট
বৃহস্পতিবার: বিশ্রাম বা যোগব্যায়াম
শুক্রবার: ১০ মিনিট অ্যাব ওয়ার্কআউট
শনিবার: ফুল-বডি ওয়ার্কআউট বা বাইরে কার্যকলাপ
রবিবার: বিশ্রাম
প্রশ্ন: নতুনরা কি এটি করতে পারবে?
হ্যাঁ, অবশ্যই। নতুনরা কম সময় ধরে রাখতে পারে বা বেশি বিশ্রাম নিতে পারে।
প্রশ্ন: কতবার করা উচিত?
সপ্তাহে ৩–৪ দিন যথেষ্ট। প্রতিদিন করলে শরীরের সাড়া শোনা জরুরি।
প্রশ্ন: এতে কি পেটের মেদ কমবে?
অ্যাব ওয়ার্কআউট পেশি শক্ত করে, তবে মেদ কমাতে খাবার ও কার্ডিওর ভূমিকা বেশি।
প্রশ্ন: যন্ত্রপাতি দরকার আছে কি?
না, একদমই নয়। তবে চাইলে রেসিস্ট্যান্স ব্যান্ড বা হালকা ডাম্বেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
সময় নির্ধারণ করুন: প্রতিদিন একই সময়ে করুন।
অগ্রগতি লিখে রাখুন: কত সেকেন্ড প্ল্যাঙ্ক করতে পারলেন নোট করুন।
মিউজিক ব্যবহার করুন: ব্যায়ামকে মজাদার করে।
নিজেকে পুরস্কার দিন: লক্ষ্য পূর্ণ হলে ছোট পুরস্কার নিন।
ধৈর্য ধরুন: ফলাফল আসে ধীরে ধীরে।
শক্তিশালী কোর গড়তে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুশীলন দরকার নেই। প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিটের একটি অ্যাব রুটিন যথেষ্ট। সঠিক ভঙ্গি, নিয়মিত অভ্যাস এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মিলে আপনি কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শরীরের পরিবর্তন টের পাবেন।
আজই শুরু করুন। মাত্র দশ মিনিটের এই বিনিয়োগ আপনাকে আরও শক্তিশালী, আত্মবিশ্বাসী এবং ফিট করে তুলবে।